অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ভারতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে আমেরিকার ট্রাম্প সরকার। তবে, তাতে বিন্দুমাত্র মাথা নোয়াতে নারাজ ভারত। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার চেয়েছিল তার এই এক ঢিলে ভারত ও রাশিয়া দু’দেশকে-ই প্যাঁচে ফেলতে পারবে তারা, কিন্তু তাদের সেই আশা আর বাস্তবায়িত হল না। কারণ ট্যাক্সের চাপ ভারতের ঘাড়ে ফেলতেই, পাল্টা চাল চেলে দিল মোদীর সরকার। ভারতের ব্যবসা যাতে কোনওভাবেই মার না খায়, সেদিকে নজর রাখতেই নতুন পথ আবিষ্কার করল ভারত। ইতিমধ্যেই সেই বিশেষ ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে।
জানা গেছে, এতদিন পর্যন্ত ভারত যে তিনটি শিল্প মার্কিন দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করত। এবার সেখান থেকেই বিকল্প পথের সন্ধান করছে ভারত সরকার, ফলে ভারতকে এবার এই তিন শিল্পের জন্য বিকল্প বাজার তৈরি করতে হবে। এর ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরা কোনওভাবে ক্ষতির সামনে পড়বেন না। অর্থাৎ, এখানেই ট্রাম্পকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তিনি নাকি বিকল্প হিসেবে ৪০টি দেশের কথা ভেবে ফেলেছেন, যেখান থেকে ভারতের ব্যবসা অতি সহজে চলতে পারে। এই দেশের লিস্টে রয়েছে— জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, রাশিয়া, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-র মতো দেশের নাম।
সূত্রের খবর, আমেরিকার বিকল্প হিসাবে ভারত এই ৪০টি দেশের কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য, গুণমান পোশাক রফতানিকারক হিসাবে তুলে ধরবে। যদিও ভারত তার ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও নানা শিল্প ইতিমধ্যেই ২২০টি দেশে রফতানি করে চলেছে। তবে এর মধ্যে বিশেষ ৪০টি দেশকেই মূল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকারী দেশ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। ওই দেশগুলিতে মোট ৫৯০ বিলিয়ন ডলারের বস্ত্র রফতানি হয়, যার মধ্যে মাত্র ৫-৬% ভারত থেকে যায়। তবে, এবার এই বাজার পোক্ত হাতে ধরতে চায় ভারত, তাই এক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিতে উদ্যোগী তারা। জানলে অবাক হবেন, ২০২৪-২৫ সালে ভারতের বস্ত্র সেক্টরের মোট আয় ছিল ১৭৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৩৭ বিলিয়ন ডলার এসেছিল শুধু আমেরিকা থেকে। আর এভাবেই বর্তমানে ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম বস্ত্র রফতানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন রাষ্ট্র অতিরিক্ত শুক্ল চাপালেও, তাদের এত সহজে ছাড়বে না ভারত। কারণ ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যদি ভারত পুরোপুরি নেতিবাচক দিক নেয়, তবে সেটি দুই দেশের সম্পর্কে বিরাট প্রভাব ফেলবে। তাই মোটের ওপর মার্কিন দেশকে না চটিয়ে, বিশ্বের বাকি দেশের সঙ্গে নিজেদের ব্যবসা আরও শক্ত করতে চাইছে ভারত। যদিও সেই কাজ করতে খানিকটা সময় লাগবে। তবে, এত সমস্যার সম্মুখীন হয়েও ভারত আগামীদিনে কিভাবে মার্কিন দেশে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যায়, সেদিকে এখন তাকিয়ে বিশ্বের বাকি শক্তিধর দেশগুলি।