লোকসভায় এবার ১৪০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যেখানে কিনা সংবিধানের ৭৫ অনুচ্ছেদে নতুন ৫(এ) ধারা যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রস্তাবিত ওই আইনে বলা হবে, যদি দেশের বা রাজ্যের কোনো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বা রাজ্যের কোনো মন্ত্রী গুরুতর কোনো অভিযোগের দায়ে গ্রেফতার হন এবং সেই অপরাধের জেরে তাকে টানা ৩০ দিন কারাদণ্ডে বন্দি থাকতে হয়, তবে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। নয়তো, তাকে সরকারের তরফ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে ওই বিলে এও বলা হয়েছে যে, বহিষ্কৃত মন্ত্রীরা মুক্তি পাওয়ার পর ফের তাদের পদ ফিরে পেতে পারেন। যদিও এই বিলটি পেশের পর তা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে এবং তারপরই এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, এমন বিল নিয়ে ফের এক চোট ঝড় উঠতে চলেছে সংসদে। কারণ তাদের অনেকের মতে, আইনের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্র যে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর ক্ষমতা নিজের হাতেই নিতে চাইছে। সেই সাথে অনেকের দাবি, যাতে কেন্দ্রের দিকে আঙুল না ওঠে সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পদের কথাটিও এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে বিলে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে এমন অভিযোগেই কেবল গ্রেপ্তার হলে বন্দিদশার ৩১তম দিনে পদ খোয়াতে হবে ওই মন্ত্রীকে। এহেন কথাও কিন্তু বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস জেলে থাকলেও, তিনি এখনও ইস্তফা দেননি। বরং, জেল থেকেই তিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, নতুন এই আইন পাশ হলে ৩১তম দিনেই মন্ত্রিত্ব থেকে সরতে হবে যে কোনো বন্দি মন্ত্রীকে। ইতিমধ্যেই এমন বিল পাশের কারণে আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। তার কথায়, পক্ষপাতী কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করিয়ে সে রাজ্যের সরকার নড়বড়ে করে দেওয়ার এটিই সেরা উপায়। তাছাড়া, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হারাতে না পারলে, বিনা বাধায় তাদের গ্রেফতার করে অনায়াসে সরিয়ে দেওয়া যাবে। আবার শাসকদলের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে স্পর্শ করা হবে না, এমনিই সব ছক কষেছে কেন্দ্র।
অন্যদিকে, এমন বিল পেশ করা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল সরকারও। তাদের দাবি, এভাবে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে আরও অপব্যবহারের দরজা খুলে গেল এই বিলের মাধ্যমে। যদিও এই বিল পেশ হলে কোনো ভোটাভুটি হবে না সংসদে, বরং যৌথ সংসদীয় কমিটিতে সেটি পাঠানো হবে। তাছাড়া, এই বিলের পাশাপাশি এদিন আরও দুটি বিল লোকসভায় পেশ করবেন অমিত শাহ। একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসনিক সংশোধনী বিল এবং অন্যটি জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল, ২০২৫। এদিকে আগামী ২১শে আগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হবে, ফলে এই ২ দিনে বিলগুলি নিয়ে কতটা উত্তপ্ত হয় সংসদ সেদিকেই এখন চোখ সকলের।