যোগ্য শিক্ষক, কিন্তু তা সত্বেও চাকরি চলে গিয়েছিল সুবল সোরেনের। আর এর পর থেকেই বউ-সন্তানদের কি খাওয়াবেন সে চিন্তায় মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল তার। তিনি চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার দুপুর নাগাদ কলকাতার আর.এন.টেগোর হাসপাতালে মৃত্যু হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা সেই সুবল সোরেনের। মৃত শিক্ষকের পরিবারের দাবি, তীব্র মানসিক চাপ ও ডিপ্রসনে থাকার জেরেই মৃত্যু হয়েছে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকের। আর এরপরই একের পর এক বিরোধীর কটাক্ষ বাণ ধেয়ে আসছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার ৩৫ বছরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সুবল সোরেন গত মঙ্গলবার হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে প্রথমে ডেবরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে সেখান থেকে তাকে কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। শুক্রবার দুপুর নাগাদ সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ, পুলিশ মৃতদেহটি দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সে করে সরিয়ে নিতে চাইছিল। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করেন এবং বিকেল থেকেই ই.এম. বাইপাস জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার জেরে তৃণমূল সুপ্রিমো-কে আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার কথায়, রাজ্য সরকার যদি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তৎকালীন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের তালিকা জমা দিত, তাহলে আজ এত জন চাকরি হারাত না। এমনকি, সুবল সোরেনেরও প্রাণ হারাতে হত না। পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও প্রশ্ন তুলেছেন, “পুলিশ কেন এত তাড়াহুড়ো করছিল? আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে কি হয়?” আর এরপরই যোগ্য শিক্ষকের এমন মর্মান্তিক পরিণতি দেখে আক্রমণ তীরে বিদ্ধ করেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-ও।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, “কেন যোগ্য অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করছেন না? মমতা ব্যানার্জী যে জালিয়াতি করেছেন তা ধরা পড়ে গেছে। এখন সেই শোধ তুলছেন যোগ্য প্রার্থীদের উপর। যিনি মারা গেছেন তিনি একজন আদিবাসী শিক্ষক, তাই তিনি যোগ্য বলেই মনে হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জী কী চাইছেন, এভাবেই যোগ্যরা মারা যাক? তার স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ি করেছেন। আমি মনে করি সঠিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্ল্যান A,B, Z অনেক কিছু আছে, আগে যোগ্যদের তালিকাটা প্রকাশ করুন। আপনারা কিছুই করবেন না, মাঝখান থেকে একের পর এক যোগ্য শিক্ষক এভাবে প্রাণ হারাবেন। আমরা কল্পনাই করতে পারি না, এভাবে একটা রাজ্য চলছে।”
উল্লেখ্য, গত ৭ বছর ধরে শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত ছিলেন সুবল সোরেন। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার কারণে ২৫,৭৫৩ জন চাকরি হারান। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, নতুন করে ৪৪,২০৩ পদে নিয়োগ হবে এবং তা ২০২৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। কিন্তু চাকরিহারা প্রার্থীরা নতুন পরীক্ষায় বসতে অস্বীকার করে আন্দোলনে নামেন। আর সেই আন্দোলন জারি রাখাকালীন আচমকা মানসিক চাপের কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক। সত্যিই, এভাবে যদি একের পর এক শিক্ষক যোগ্যতা থাকা সত্বেও চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু শক্তিশালী থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে সকলের মনেই।